বাংলাদেশের শ্রম আইনের ইতিবৃত্ত-


বাংলাদেশের শ্রম আইনের ইতিবৃত্ত- 


“Labour Laws are to be interpreted by those qualified in the field (legal personnel) and implementation sought from Human Resources wing of the corporate structure, qualified for the purpose; or a personnel having the qualification and /or experience in the study of both ,Human resources Management and the Law.”           

― Henrietta Newton Martin B.Com LLB gold medalist LLM gold medalist MMS etc – Legal Consultant

বাংলাদেশ শ্রম আইনের বিষয়টি যেভাবে আলোচনা হওয়া উচিত সেভাবে কখনোই গুরুত্ব পাইনি। একটি দেশের শ্রম আইন শুধু শ্রমিকের স্বার্থই সংরক্ষণ করে না। তা মালিকের স্বার্থকেও সুরক্ষিত করে কিন্তু দূভার্গজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে শ্রম আইন এখনো সাধারণের ধারণার বাইরে রয়ে গেছে এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না। যে কোন আইন প্রণয়নের চেয়ে প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান নিবন্ধে শুধুমাত্র বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রণয়নের ইতিহাস নিয়ে তথ্য ভিত্তিক আলোচনা করা হলো। শ্রম আইনের প্রয়োগ ও কার্যকারিতা নিয়ে পরবর্তীতে স্বতন্ত্র কোন নিবন্ধে আলোচনার ইচ্ছা রইল। প্রথমে দেখা যাক শ্রম আইন বলতে কি বুঝায় ?

শ্রম আইন বলতে মূলতঃ ” শিল্পে শান্তি রক্ষার” জন্যে স্বীকৃত যেসব রাষ্ট্রয় বিধি বা প্রথার মাধ্যমে মালিক-শ্রমিক বা শ্রমিক-শ্রমিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে সেগুলোকে বুঝায়। আধুনিক শ্রম আইন রাষ্ট্রীয় আইন সভা কর্তৃক প্রণীত। শ্রম আইন দ্বারা শ্রমিক নিয়োগ, মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক, সর্বনিম্ন মজুরীর হার নির্ধারণ, মজুরী পরিশোধ, কার্যকালে দুর্ঘটনাজনিত কারণে শ্রমিকের জখমের জন্যে ক্ষতিপূরণ, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শিল্প বিরোধ উত্থাপন ও নিষ্পত্তি, শ্রমিকের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কল্যাণ ও চাকুরীর অবস্থা ও পরিবেশ এবং শিক্ষাধীনতা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান শাসন আমলে জারিকৃত শ্রম আইনগুলোকে পর্যালোচনা করে ২৭ টি শ্রম আইন একত্রিত করে বাংলাদেশ শ্রম আইন,২০০৬ নামে একটি শ্রম আইন জারি করা হয়েছে ১১ই অক্টোবর,২০০৬ ইং তারিখ। সর্বশেষ ২০১৩ ইং সালে বাংলাদেশ শ্রম আইনে সংশোধণী আনায়ন করা হয়। যা রানা প্লাজা পরবর্তী ঘটনার প্রেক্ষিতে বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার চাপে পড়ে করা হয়। যদিও তা নিয়েও কোন কোন মহল প্রশ্ন তুলেছে।

বাংলাদেশের শ্রম আইনের উদ্দেশ্য :


 যে কোন শিল্প মূলধন ঘন বা শ্রম ঘন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রযুক্তিজ্ঞানের দুর্বলতা হউক বা সস্তা শ্রমের আধিক্যে হোক এ দেশের বেশিরভাগ শিল্প শ্রমঘন। তবে শিল্প মূলধনঘন বা শ্রমঘন যাই হোক না কেন, ব্যবসা-বানিজ্য এবং শিল্প ক্ষেত্রে নিয়ামক হচ্ছে উক্ত দু’টি অর্থাৎ পুঁজি এবং শ্রম তেমনি পক্ষও দু’টি মালিক এবং শ্রমিক। ব্যবসা করতে হলে বা শিল্প কারখানা চালাতে হলে এ দুটি পক্ষের একটি ছাড়া অন্যটির কোন অস্তিত্ত্ব কল্পনা করা যায় না। শিল্প ক্ষেত্রে একটি আরেকটির পরিপূরক। কিন্তু সম্পর্ক ঘনিষ্ট হলে কি হবে মালিক শ্রমিক সম্পর্ক সবসময় মধুর থাকে না, দেখা দেয় বিরোধ। মালিকে-শ্রমিকে বিরোধ নতুন নয়, যুগ যুগ ধরেই এ বিরোধ চলে আসছে। স্বার্থের যেখানে দ্বন্দ রয়েছে সেখানে বিরোধ কিছুটা থাকাই স্বাভাবিক। তবে আজকের স্বীকৃত অবস্থা হচ্ছে প্রতিষ্ঠান থাকবে, মালিক  থাকবে, শ্রম থাকবে, শ্রমিক থাকবে। তবে বিরোধ মিটাতে হবে। মিটাতে হবে আইনসঙ্গতভাবে। মালিক-শ্রমিক বিরোধ মিটিয়ে শিল্পে শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে শ্রম আইন হচ্ছে সেতুবন্ধন। বর্তমান যুগে শ্রম আইনের লক্ষ্য হচ্ছে পূঁজি ও শ্রমের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন। এ যুগে শ্রম আইনে পূঁজি বা শ্রম কোনটাকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ শিল্পায়ন হচ্ছে ব্যাপক মাত্রায় কর্মসংস্থান উপায়। আর শিল্পে মালিক-শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষিত হতে পারে শ্রম আইনের যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ শ্রম আইন,২০০৬  কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে :াা্


বাংলাদেশ শ্রম আইন,২০০৬ সমগ্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে। বর্তমান শ্রম আইনের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই কোন কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ আইন প্রযোজ্য তা না বলে আইনটি কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় তা বলা হয়েছে। আইনের ১ ধারার (৪) উপ-ধারায় বলা হয়েছে এ আইন নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ বা শ্রমিকগণের উপর প্রযোজ্য হবে না, যথাঃ (ক) সরকারের বা সরকারের অধীনস্থ কোন অফিস; সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস; সমরাস্ত্র কারখান , অসুস্থ, অক্ষম, বৃদ্ধ, দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী এতিম পরিত্যক্তা মহিলা বা শিশু অথবা বিধবাদের চিকিৎসা, যত্ন বা সেবার জন্য পরিচালিত কিন্ত মুনাফা বা লাভের লক্ষ্যে পরিচালিত নয় এইরুপ কোন প্রতিষ্টান: প্রকাশ্য প্রদর্শনীতে ইহার প্রয়োজনে স্থাপিত এমন দোকানপাট বা স্টল যাতে শুধু খুচরা বেচা-কেনা চলে; প্রকাশ মেলায় বা বাজারে ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে স্থাপিত এমন দোকনপাট বা স্টল , শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বা  গবেষণা প্রতিষ্টান; মুনাফা বা লাভের জন্যে পরিচালিত নয় এমন ছাত্রাবাস বা মেস; দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রয়োগের ক্ষেত্রে, সরকারের মালিকানাধীন এবং সরকার কর্তৃক সরাসরিভঅবে পরিচালিত এমন কোন দোকান বা শিল্প বা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান যাতে শ্রমিকগণ সরকারী কর্মচারীগণের উপর প্রযোজ্য আচরণ বিধি দ্বারা পরিচালিত হন: এমন কোন শ্রমিক যার নিয়োগ এবং চাকুরির শর্তাবলী সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬২,৭৯,১২৩ বা ১৩৩ এর অধীন প্রণীত আইন বা বিধি দ্বারা পরিচালিত হয়, তবে দ্বাদশ, ত্রয়োদশ এবং চতুর্দশ অধ্যায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে নি¤œলিখিত প্রতিষ্টানে নিযুক্ত কোন শ্রমিক এই নিষেধের অন্তর্ভুক্ত হবেন না, যথা: রেল বিভাগ, ডাক, তার ও টেলিফোন বিভাগ, সড়ক, জনপন বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, গণস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ সরকারী মুদ্রনালয়, দফা, খ, গ, ঘ , উ, চ, ছ, জ – তে উল্লিখিত কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কোন শ্রমিক, তবে দ্বাদশ, ত্রয়োদশ এবং চতুর্দশ অধ্যায়ের প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত, শিক্ষক ব্যতীত, অন্য কোন শ্রমিক এই নিষেধের অন্তর্ভুক্ত হবে না; ঠ দ্বাদশ;ত্রয়োদশ এবং চর্তুর্দশ অধ্যায়ের প্রয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে, কোন নাবিক; ড ষোড়শ অধ্যায়ের প্রয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে, সমুদ্রগামী জাহাজ; ঢ এমন কোন কৃষি খামার যেখানে সাধারণত দশ জনের কম শ্রমিক কাজ করেন; ণ গৃহ পরিচালক; এবং ত, এমন কোন প্রতিষ্ঠান যা এর মালিক কর্তৃক পরিবারের সদস্যগণের সাহায্যে পরিচালিত হয় এবং যাতে মজুরীর বিনিময়ে কোন শ্রমিক নিযুক্ত থাকেন না।

রানা প্লাজা ট্রাজেডি বাংলাদেশের শ্রম পরিবেশের মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে

বাংলাদেশের শ্রম আইন প্রণয়ণের ইতিবৃত্ত :


১৭৬০ সাল থেকে আরম্ভ হওয়া ইউরোপের শিল্পবিপ্লব আমাদের এ ধারণাই দেয় যে, শিল্পায়নের মাধ্যমে দ্ররিদ্রতা নির্মূল করা সম্ভব। আর সেই শিল্পের প্রয়োজনীয় দুটি উপাদান মূলধন ও শ্রম। উক্ত উপাদান দুটির সহবস্থান নিশ্চিত করার জন্যই মূলতঃ শ্রম আইন। সুতরাং শ্রম আইন বলতে বুঝায় ’শিল্পে শান্তি রক্ষার” জন্যে স্বীকৃত যেসব রাষ্ট্রকর্তৃক প্রণীত বিধি বা প্রথার মাধ্যমে মালিক- শ্রমিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। শ্রম আইন জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত আইন প্রণেতাদের মাধ্যমে তৈরি হয় অর্থাৎ যারা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে আইন সভার সদস্য হয়। বর্তমানের শিল্প কেন্দ্রিক উন্নয়ন ধারণায় অনুযায়ী শ্রম আইনে পুঁজি বা শ্রম কোনটাকেই কোনটার চেয়ে খাটো করে দেখা হয় না। অর্থাৎ এখনকার শ্রম আইনের লক্ষ্য হচ্ছে পুঁজি ও শ্রমের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন। শ্রম আইনের বর্তমান রুপ একটি ধারাবাহিক বিবর্তন প্রক্রিয়ার ফল। আধুনিক আইন ব্যবস্থার মূল হিসেসে যেমন রোমান আইনকে ধরা হয় তেমনি শ্রম আইনের গোড়াপত্তনও হয়েছিল প্রাচীন রোমেই। প্রাচীন রোমেই সর্বপ্রথম কিছু কিছু ব্যক্তি যেমন শিল্পী, চিকিৎসক, পশু পালক এদের মজুরী  নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। এরপর হাজার হাজার বছর ধরে বহু চড়াই-উৎরাই পার হয়ে শ্রম আইন বর্তমান রুপ লাভ করেছে। আধুনিক শ্রম আইনের সূত্রপাত ঘটেছিল ১৮০২ সালে ইংল্যান্ডে। বিভিন্ন কমিশনের তদন্ত ও সুপারিশের ভিত্তিতে প্রণীত এ আইন জারি করা হয়েছিল। কারখানা শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রয়োজন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সমসাময়িক কালে ইংল্যান্ডে আরো চারটি শ্রম আইন জারি করা হয়েছি। ১৯১৯ সনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আই এল ও গঠন বিশ্বব্যাপী আধুনিক শ্রম আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী  ঘটনা। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার প্রচেষ্টায় শ্রম আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

১৯১৯ সালের ২৯শে অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১৯২০ সালের ২৭ শে জানুয়ারী পর্যন্ত প্রায় তিন মাস ধরে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মধ্যদিয়ে আই এল ও প্রতিষ্ঠত হয়। এর ২৫ বছর পর ১৯৪৪ সনে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অন্তিম লগ্নে ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে আই এল ও’র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ বর্ণনা করে আই এল ও এর মূলনীতি সম্বলিত এক ঘোষণা গৃহীত হয়। এটি ’ফিলাডেলফিয়া ঘোষণা’ নামে খ্যাত। এ ঘোষণা সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ”মত প্রকাশ ও সংঘঠিত হওয়ার অধিকার নিরবচ্ছিন্ন সমাজ প্রগতির জন্য অপরিহার্য” এবং “যে কোন স্থানের দারিদ্র্যই সব জায়গার সমৃদ্ধির প্রতি হুমকিস্বরুপ”। আই এল ও তার প্রতিষ্ঠা-লগ্ন থেকে বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু ‘শ্রমমান নির্ধারণ করে আসছে এগুলো ‘কনভেনশন’ নামে পরিচিত। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র আই এল ও কর্তৃক নির্ধারিত এসব শ্রমমান অনুসরণ করে সাধারণত: নিজেদের দেশের শ্রম আইন প্রণয়ন করে থাকে। বাংলাদেশ আই এল ও এর সদস্য রাষ্ট্র। এ যাবত বাংলাদেশ ৩৯ টি ‘আই এল ও কনভেনশ’ অনুসমর্থন করেছে।

উপমহাদেশে শিল্প স্থাপিত হয়েছে মূলতঃ দখলদার ইংরেজদের সুবিধার জন্যই। এখানকার সস্তা কাঁচামালকে তারা স্থানীয় সস্তা শ্রম ব্যবহার করে অনেক বেশী মুনাফা অর্জনের জন্যই শিল্প স্থাপন করে। ১৮৫৩ সালে ভারতে স্থাপিত প্রথম শিল্প হচ্ছে গ্রেট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানীর ২০ মাইল রেলপথ। এরপর আসে তুলা, পাট, কয়লাখনি ও চা বাগান।ডি এইচ বুকানন লিখেছেন যে, ইংল্যান্ডের প্রথম দিককার শ্রমিকদের যে অবস্থা ছিল ভারতের শ্রমিকদের অবস্থা তার চাইতেও শোচনীয়। মূলত: বৃটিশ শিল্পপতিদের পাস্পরিক স্বার্থ সংঘাতের কারণেই ভারতে শ্রম আইনের উদ্ভব ও প্রয়োগ ঘটে। যে সকল শিল্প কারখানা ভারতে উৎপাদনরত ছিল তারা সস্তা শ্রম সস্তা সহজলভ্য কাঁচামালের কারণে কম উৎপাদন ব্যয়ের কারণে বাজারে অধিক সুবিধা ভোগ করছি। ফলে তার ভারতে শ্রম আইন প্রয়োগ করে প্রতিযোগিতায় ফিওে আসার প্রক্রিয়া গ্রহণ করে। ১৮৭৬ সালে বৃটিশ তুলাকল মালিকদের একটি দল সেক্রেটারী অব দ্য স্টেটস এর সংগে দেখা করে এই বিষয়টি উপস্থাপন করে। তারই ফলশ্রুতিতে “প্রথম বোম্বে ফ্যাক্টরী কমিশন” নিয়োজিত হয়। বোম্বাই এর সমাজকর্মী শাপুরজী বেংগলী ১৮৭৮ সালে সরকারের কাছে কারখানা আইনের রুপরেখা পেশ করেন।  ফলে  প্রথম ফলপ্রসূ শ্রম আইন “ ভারতীয় কারখানা আইন” জারি হয় ১৮৮১ সালে। মন্দের ভাল হিসাবে বলা যাই এটিই প্রথম ভারতের শ্রম আইন। যদিও এর আগে জরিকৃত শ্রম বিষয়ক আইনগুলোকে শ্রম আইন হিসেবে ধরা যায় না। উদাহরণস্বরুপ ১৮৫৯ সনের শ্রমিকদের চাকুরির চুক্তিভঙ্গ আইনের উল্লেখ করা যায়। এ আইনে মালিকের অত্যাচারে পলাতক-শ্রমিকদেরকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার এবং দৈহিক শাস্তি দেয়ার জন্য মালিকদের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। সেই যাই হোক, এরপর ইংল্যান্ডের ল্যাংকাশায়ারের কারখানা পরিদর্শক মিয়াডি কিং ১৮৮২ সালে এবং মিস্টার জোনস্ ১৮৮৭ সালে কারখানাসমূহ পরিদর্শন কাজ পরিচালনা করে সরকারকে রিপোর্ট প্রদান করে। এই কার্যক্রম গৃহীত হওয়ার পরবর্তীতে যে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে তার পুরাধা ছিলেন নারায়ন মেঘাজী লোখান্ডে। বির্তক থাকলেও তিনিই উপমহাদেশের প্রথম শ্রমিক নেতা। তাঁরই নেতৃত্বে ১৮৮৪ সালে বোম্বাইতে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকদের এক সভায় সাপ্তাহক ছুটি, মধ্যাহ্ন বিরতিতে বিশ্রাম, কাজের সময়, বেতন প্রদান তারিখ ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা সম্বলিত ৫ দফা দাবী উপস্থাপিত হয়। এই ভূখন্ডে এটাই শ্রমিকদের প্রথম দাবীনামা। ১৮৭৪ সালে কলিকতায় “ভারত শ্রমজীবি” নামক পত্রিকা প্রকাশ করেন শর্শীপদ ব্যানার্জী। কলিকতার ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্টা কওে ১৮৭৮ সালে ওয়াকিং মেসন্স মিশন”। ১৮৯০ সালে লোখান্ডের সভাপতিত্বে প্রতিষ্টিত হয় “ বোম্বে মিল হ্যান্ডস এসোসিয়েশন” এটাকেই ভারতের প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন বলা যায়। যদিও এর কোন সংবিধান ও সদস্যপদ ছিল না। এ সময়ে কাজ বন্ধ বা ধর্মঘটেরও উদ্ভব হয়। ১৮২৭ সালে কলিকতার পাল্কী বেহারাদের ধর্মঘট ভারতের প্রথম শ্রমিক ধর্মঘট।১৯১৮ সালের ২৮ শে এপ্রিল বি.পি. দয়াদিয়ার নেতৃত্বে যথার্থ ট্রেড ইউনিয়ন “মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন” আত্নপ্রকাশ করে। এরপরই আসে “ আহমেদাবাদ লেবার এসোসিয়েশন” যার প্রতিষ্টাতা ছিলেনমহাত্না গান্ধী। ১৯২০ সালে গঠিত হয় অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস। লালা লজপত রায় ছিলেন সভাপতি। মতিলাল নেহেরু, এ্যানি বেসান্ত প্রমুখ এতে সক্রিয় ছিলেন। শিল্পে অসন্তোষকে কেন্দ্র কওে ১৯২১ সালে বেংগল কমিটি এবং ১৯২২ সালে বোম্বে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমিটি গঠিত হয়।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর বিশ্বব্যাপী  শ্রম আইনের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। বৃটিশ-ভারতও আই এল ও এর সদস্য ছিল। ১৯১৯ সালে কাজের ঘন্টা (শিল্প) কনভেনশন (কনভেনশন নং ১) গৃহীত হওয়ার পর ১৯২২ সালে ভারতীয় কারখানা আইন সংশোধন করা হয়। ১৯২৩ সালের ট্রেড ইউনিয়ন আইন এবং প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছর মেয়াদ নির্ধারণ করে ১৯২৯ সালে শ্রম বিরোধ আইন জারি করা হয় এবং যেখানে প্রথম শ্রম বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের বিধান করা হয়। ১৯২৯ সালে তৎকালীন ভারত স¤্রাট শ্রম বিষয়ক সমস্যাসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্তপূর্বক শ্রম  আইনের উন্নয়নের লক্ষ্যে রয়েল কমিশন নামে খ্যাত একটি কমিশন গঠন করেন। শ্রম আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এটি একটি মাইল ফলক। কমিশন রিপোর্ট পেশ করে ১৯৩০ সালে । কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে বিভিন্ন আইন সংশোধন করা হয় এবং উক্ত সুপারিশ অনুযায়ী শ্রম বিরোধ আইন স্থায়ী আইনে পরিণত হয়। পিতা-মাতা কর্তৃক শিশুদের শ্রম বন্ধক দেয়ার প্রথা রোধ করার উদ্দেশ্যে ১৯৩৩ সালে শিশু (শ্রম বন্ধকী) আইন প্রণয়ন করা হয়। মহাজনের কবল থেকে শ্রমিকদের রক্ষা করার জন্য ১৯৩৪ সালে শ্রমিকদের রক্ষাকরণ আইনজারি করা হয়। ডক শ্রমিকদের চাকরি সংক্রান্ত ডক শ্রমিক আইন জারি হয় ১৯৩৪ সালে । শিল্প প্রতিষ্টানের শ্রমিকদের মজুরী পরিশোধ নিয়ন্ত্রণের জন্য মজুরী পরিশোধ আইন জারি হয় ১৯৩৬ সালে । শিশু শ্রমিকদের নিয়োগ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে শিশু শ্রমিক নিয়োগ আইন প্রণীত হয় ১৯৩৮ সালে । একই সনে দুর্ঘটনায় আহত  শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্যে দায়েরকৃত মামলায় কতিপয় প্রশ্ন উত্থাপন করা বারিত করে মালিকদের দায়িত্ব আইনজারি হয়। এদিকে ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইন পাস হওয়ার পর ১৯৩৭ সাল থেকে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিভিন্ন প্রদেশসমূহ কমিটি নিয়োগ করে পুঁজি ও শ্রমের সমন্বয় সাধনের জন্য বেশ কিছু শ্রম আইন জারি করে। তৎকালীন বেঙ্গল গভর্ণমেন্ট কর্তৃক জারিকৃত মহিলা শ্রমিকদের মাতৃকল্যাণ সুবিধা সংক্রান্ত ১৯৩৯ সালের মাতৃকল্যাণ আইন কারখানা নয় এমন সব দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদেও ছুটি, কাজের সময়, মজুরী ইত্যাদি সংক্রান্ত ১৯৪০ সালের বঙ্গীয় দোকান

বাংলাদেশের শ্রম আইনের আরো সংশোধনের জন্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্টের চাপ রয়েছে।

ও প্রতিষ্ঠান আইন,১৯৪২ সালের সাপ্তাহিক ছুটি আইন অন্যতম। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও দামামা বেজে উঠে। শ্রম আইনের ক্ষেত্রেও এ সময়ে কিছুটা স্থবিরতা পরিলক্ষিত হয়। বৃটিশ শাসনামলের শেষের দিকে শিল্প বিরোধ সম্পর্কে অনুসন্ধান এবং বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে ১৯২৯ সালের শ্রম বিরোধ আইন বাতিল করে তদস্থলে শিল্প সম্পর্ক বিষয়ক একটি যথার্থ আইন ১৯৪৭ সালের শিল্প বিরোধ আইন জারি করা হয়।

১৯৪৭ সালের পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর বৃটিশ-ভারতে জারিকৃত শ্রম আইনগুলো চালু রাখা হয়। ১৯৩৯ সালের বঙ্গীয় মাতৃকল্যাণ আইনের আলোকে চা বাগান শ্রমিকদের জন্য ১৯৫০ সালের জারি হয় মাতৃকল্যাণ (চা বাগান) আইন নামে একটি বিশেষ মাতৃকল্যাণ আইন জারি করা হয়। ১৯৪০ সালের বঙ্গীয় দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইন বাতিল করে তদস্থলে জারি করা হয় ১৯৫১ সালের পূর্ববঙ্গ দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইন। ১৯৫২ সালের জারি করা হয় নিয়োগ (চাকুরীর রেকর্ড) আইন এ আইনে বাধ্যতামূলকভাবে কতিপয় শ্রেণীর চাকুরীতে নিযুক্ত ব্যক্তিদের চাকুরির রেকর্ড সংরক্ষণের বিধান করা হয়। এ আইনে কর্মচারীর ‘সার্ভিস বুক’ রাখার বিধান করা হয়। এরপর শিল্প সংস্থায় নিযুক্ত শ্রমিকদের নি¤œতম মজুরীর হার নিয়ন্ত্রণের বিধান করে ১৯৫৭ সালে নি¤œতম মজুরী আইন জারি করা হয়। পরে এ আইনটি বাতিল করে পুনরায় ১৯৬১ সালে নতুন করে জারি করা হয় নি¤œতম মজুরী অধ্যাদেম,১৯৬১। চা বাগান কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিল স্থাপনের উদ্দেশ্যে বাগান কর্মচারী ভবিষ্যৎ তহবিল অধ্যাদেশ জারি করা হয় ১৯৫৯ সালে। একই বছর শিল্প বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে জারি করা হয় ১৯৫৯ শিল্প বিরোধ অধ্যাদেশ। ১৯৬০ সালের দুটি শ্রম আইন জারি করা হয়। কর্মরত সাংবাদিকদের চাকুরির শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয় ১৯৬০ সালের বার্তাজীবী (চাকুরির শর্তাবলী) অধ্যাদেশ। শিল্প এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের চাকুরির শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে শিল্প ও বাণিজ্যিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) অধ্যাদেশ জারি করা হয় ১৯৬০ সালে। সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের কাজের ঘন্টা এবং চাকুরির অন্যান্য শর্তাবলী নিয়ন্ত্রনের জন্য ১৯৬১ সালে সড়ক পরিবহন শ্রমিক অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ১৯৫০ সালের শিক্ষানবিশি আইন বাতিল করে ১৯৬২ সালের শিক্ষানবিশি অধ্যাদেশ এবং চা বাগানসমূহের শ্রমিকদের কল্যাণ এবং কাজের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে ১৯৬০ সালের চা বাগান শ্রমিক অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

শ্রম আইন একটি দেশের শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
শ্রম আইন একটি দেশের শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

১৯৬৫ সাল শ্রম আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূণ বছর বলা হয়ে থাকে। এ বছরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণীত হয়েছিল। এ বছরে ১৯৩৪ সালের কারখানা আইন বাতিল করে জারি করা হয় ১৯৬৫ সালের কারখানা আইন ১৯৫১সালের পূর্ববঙ্গ দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইন বাতিল করে তদস্থলে প্রণীত হয় ১৯৬৫ সালের দোকান ও প্রতিষ্ঠান  আইন এবং ১৯৬০ সালের শিল্প ও বাণিজ্যিক নিয়োগ ( স্থায়ী আদেশ) অধ্যাদেশ বাতিল করে তদস্থলে প্রণীত হয় ১৯৬৫ সালের শ্রমিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইন। এ ছাড়াও এ বছর শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকুরি সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহ, সরবরাহ, চাকরি নিয়ন্ত্রণ ও বন্টনের জন্য ১৯৬৫ সালের চাকরি নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এ বছরেই ১৯৫৯ সালের শিল্প বিরোধ অধ্যাদেশ বাতিল করে জারি করা হয় ১৯৬৫ সালের শ্রম বিরোধ আইন। এ ছাড়াও ১৯২৬ সালের ট্রেড ইউনিয়ন আইন বাতিল করে তদস্থলে প্রণয়ন করা হয় ১৯৬৫ সালের ট্রেড ইউনিয়ন আইন। একটি বিশেষ কল্যাণমূলক আইন কোম্পানীর মুনাফা (শ্রমিকদের অংশগ্রহণ) আইন, ১৯৬৮ জারি হয় ১৯৬৮ সালে। এতে কোম্পানীসমূহের মুনাফা শ্রমিকদের অংশগ্রহণের বিধান করা হয়। যা নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যমূলক পদক্ষেপ ছিল।

শ্রম আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বছর ১৯৬৯ সাল। ১৯৬৫ সালে ট্রেড ইউনিয়ন আইন এবং ১৯৬৫ সালের শ্রম বিরোধ আইন দু’টো বাতিল কওে দিয়ে এ বছরে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ এবং শিল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আইন ১৯৬৯ শিল্প সম্পর্ক অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

১৯৭১ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রক্তাক্ত মুক্তিযোদ্ধের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়ার পর উপরোক্ত প্রায় সব ক’টি শ্রম আইনই বহাল রাখা হয়। এরপর তেমন কোন নতুন আইন প্রণীত না হলেও প্রচলিত শ্রম আইনগুলো বিভিন্ন আইন ও অধ্যাদেশের মাধ্যমে বহুবার সংশোধন করা হয়েছে। প্রণীত উল্লেখযোগ্য শ্রম আইনসমূহের মধ্যে রয়েছে ১৯৭৪ সালের সংবাদপত্র কর্মচারী (চাকুরির শর্তাবলী) আইন এবং ১৯৮৪ সালের কৃষি শ্রমিক (নিম্নতম মজুরী) অধ্যাদেশ। কৃষি শ্রমিক নিম্নতম মজুরী অধ্যাদেশে সর্বপ্রথম কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন মজুরী নির্ধারণ করে দেওয়া হয় এবং কার্যকরীকরণের ভার দেয়া হয় গ্রাম আদালতের উপর।

বৃটিশ শাসনামল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় পর্যন্ত শ্রম আইনগুলো জারি হয়েছিল বিচ্ছিন্নভাবে। যা ঔপনিবেশিক শাসনের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। যেখানে স্বভাবতই ঔপনিবেশিক শাসকদের মানসিকতাই প্রতিফলিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ঐ সকল আইন কোন সময় সাময়িক চাহিদা পূরণ, কোন সময় রাজনৈতিক কারণসহ বিভিন্ন সংশোধনী আনা হয়েছিল। যদিও এর প্রয়োগিক দিকটি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে একটা আইনের সঙ্গে অন্যটার সংঘাত বা প্রয়োগিক জটিলতা দেখা প্রায়শ: দেখা যায়।ফলশ্রুতিতে শ্রম আইনের বিভিন্ন প্রয়োগিক ক্রটি এবং জটিলতা দূর পূর্বক আইনগুলোকে আরো সরলীকরণের মাধ্যমে একটি একক লেবার কোড প্রণয়নের দাবি উঠে। বাংলাদেশ সরকার  ১৯৯২সালে হাইকোর্টের  অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি জনাব মোঃ আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরীর নেতৃত্বে “জাতীয় শ্রম আইন কমিশন, ১৯৯২ ” নামে একটি শ্রম আইন কমিশন গঠন  করে। কমিশনের সুপারিশ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ১১ই অক্টোবর,২০০৬ ইং তারিখে বর্তমান শ্রম আইনটি প্রণীত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে এর সর্বশেষ সংশোধনী আনায়ন করা হয়। যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা গণপ্রত্যাশা ছিল বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা তাই শ্রম আইনও তার প্রতিফলন প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু তা বিলম্বে হলেও কিছুটা প্রতিফলিত হয়েছে একথা বলা যায়।

বাংলাদেশ শ্রম আইন,২০০৬ এ সর্বমোট ২১ টি অধ্যায় রয়েছে  এবং প্রতিটি অধ্যায়ে বিন্যাস্ত ভাবে শ্রমিকদের বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে । যেখানে শ্রমিকদের বিভিন্ন অধিকারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দিকটিও বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। যদিও এর যথার্থ বাস্তবায়নের বিষয়টি এখনো বেশ চ্যালেঞ্জিং হিসেবে রয়ে গেছে একথা বলা যায়। বাংলাদেশ শ্রম আইন,২০০৬   ফিলিপাইন এর শ্রম আইনকে অনুসরণ করেই প্রণীত হয়েছে। এই আইনে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হয়েছে আমাদের দেশীয় প্রেক্ষিতে। যদিও আন্তজার্তিক বিভিন্ন সংস্থা শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের স্বাধীনতাসহ বেশ কিছু বিষয়ে  শ্রম আইনের ব্যাপকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেছে।

বাংলাদেশ শ্রম আইন,২০০৬ বিশেষ আইন হিসাবে চিহ্নিত। সাধারণ ন্যায় বিচার ও সামাজিক শৃংখলা প্রতিষ্টার জন্য বিভিন্ন সামাজিক আইন দেশে প্রচলিত আছে। শ্রমিক শ্রেণীর অনেক বিষয় সাধারণ আইনের আওতায় ফেলা সম্ভব। এমনকি নাগরিক হিসাবে শ্রমিক অন্যান্য আইনের আওতায় নাগরিক সুবিধা, বিচার পাওয়ার অধিকার ভোগ করতে পারলেও চাকুরী ও কর্মক্ষেত্রে সংঘটিত বিষয়ে সব সময় সাধারণ আইনের ঊর্ধ্বে বিশেষ আইনকে স্থান দেয়ার বিধান প্রচলিত আছে। এতে সহজেই শ্রম আইনের গুরুত্ব অনুমেয়। শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার বঞ্চিত করে একটি দেশ কখনোই অগ্রগতি লাভ করতে পারে না। কারণ তারই দেশের উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখে তাদের শ্রমের বিনিময়ে। বিনিয়োগকারী যা প্রত্যক্ষ সুফলভোগী। সুতরাং তাদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে এবং শ্রমিকদের মালিকের ক্ষতি না করে নিজের অধিকারকে সম্মত করতে পারে তাহলেই একটি দেশের শিল্পায়ন বিকশিত হতে পারে। নিশ্চিত করা সম্ভব হবে সমাজ প্রগতি।

সমাপ্ত…..

No comments

Powered by Blogger.